Site Links

Monday, February 29, 2016

বড়শিতে দেড় মণ ওজনের ‘চাকল’ মাছ

ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম



  সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জেলের বড়শিতে ধরা পড়েছে দেড় মণ ওজনের ‘চাকল’ মাছ। 

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দিনগত মধ্যরাতে সুন্দরবন সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদী থেকে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নেছার আলী গাজীর বড়শিতে মাছটি ধরা পড়ে।

সকালে মাছটি দেখতে ভীড় জমায় উৎসুক জনতা। পরে নেছার আলী গাজী মাছটি বিক্রি করতে শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি বাজারে নিয়ে যান।

স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা জানান, জলজ এই প্রাণীটি দেখতে অনেকটা শাপলা পাতা মাছের (স্টিং রে ফিস) মতো। তবে এই ‘মাছ’ আগে তারা দেখেননি।

মাছটির ছবি দেখে সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক অলিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এটি বিরল প্রজাতির। যার বৈজ্ঞানিক নাম Himantura leoparda. চীন ও ভারত সাগরে এদের বেশি দেখা যায়। বঙ্গোপসাগরেও আছে, তবে সংখ্যায় কম। এর সবচেয়ে অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি মুখ দিয়ে বাচ্চা প্রসব করে।

সিলেটে নতুন মেরুকরন: শফিক মেয়র, কামরান প্রশাসক, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এমপি হচ্ছেন!

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ : শেখ হাসিনার সরকার ধিরে ধীরে সিলেটের গোটা রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের বিস্তর এক পরিকল্পণা নিয়ে এগুচ্ছেন। একদিকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রাসরুট লেভেলে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী করে নিয়ে গ্রাম পর্যন্ত দলীয় আধিপত্য বিস্তার করতে যাচ্ছেন, অন্যদিকে গোলযোগপূর্ণ বিভিন্ন জেলায় নিজের শক্ত ঘাটি গড়ে তুলছেন- যারা আগামীদিনের রাজনীতি ও জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবেন।
সিলেটের রাজনীতিতে বয়োবৃদ্ধ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একচ্ছত্র কর্তত্ব আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্নাতীত। মুহিতকে সবাই একবাক্যে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। মুরুব্বী হিসেবে মুহিতের পেছনে সিলেটের আওয়ামীলীগ একাট্রা। মুহিতের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন সদ্য জাতিসংঘ থেকে ফিরে আসা সফল কূটনীতিক ডঃ এ কে আব্দুল মোমেন। শেখ হাসিনার সরকার মোমেনকে এক বছর আগেই সেখান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন অধিকতর বৃহত্তর দায়িত্ব দেয়ার জন্যে। মোমেনের পেছনে সিলেটের আওয়ামীলীগও জড়ো হতে যাচ্ছেন সমানভাবে, সজ্জন, সৎ ও মুরুব্বী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাবমূর্তি এবং নিজস্ব ক্যারিশম্যাটিক ইমেজকে কাজে লাগিয়ে মোমেনও হয়ে উঠছেন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও শ্রদ্ধেয়। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী আগামী দিনের সিলেটের রাজনীতিতে দলীয় কোন্দল আর উপদল যাতে মাথা চাড়া দিয়ে না উঠে সেজন্যে নতুন মেরুকরন করতে যাচ্ছেন।
সিলেটের রাজনীতিতে শফিক চৌধুরী যেমন অপরিহার্য, তেমনি বদর উদ্দিন কামরানও। সেই সাথে উদীয়মান রাজনীতিক হিসেবে তরুণ আনোয়ারুজ্জামানও নেত্রীর কৃপা লাভে সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। ডঃ মোমেনের আগামী দিনের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য তরুণ আনোয়ারুজ্জামানের পাশাপাশি অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত শফিক চৌধুরী ও কামরানের সমন্বয়ে গোটা সিলেটকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে চান শেখ হাসিনা। আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে মেসবাহ উদ্দিন সিরাজের নাটকীয় কোন বিপর্যয় না ঘটলে সিলেটের মেয়র হিসেবে শফিক চৌধুরী, বদর উদ্দিন কামরান( কেন্দ্রীয় সাংগঠণিক সম্পাদক না হলে) জেলা প্রশাসক, আর বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের আসনে তরুন আনোয়ারুজ্জামানকে নিয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে আওয়ামীলীগে। শেখ হাসিনা চাননা ডঃ মোমেনের ক্যারিশম্যাটিক ও চৌকস ইমেজে সিলেটের রাজনীতিতে সামান্যতম দাগ লাগুক। ডঃ মোমেন শুধু সিলেটে নন- আওয়ামীলীগ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অ্যাসেট আর বিশেষ কিছু গুরু দায়িত্ব অর্পন হতে যাচ্ছেন।শেখ হাসিনার সরকারের বিশেষ অ্যাসাইনম্যান্ট নিয়ে শীগ্র মোমেনের অভিষেক হতে যাচ্ছে।
(চলবে)

Sunday, February 28, 2016

বিল গেটসের খোলা চিঠি


বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস
যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি অঙ্গরাজ্যের এক হাইস্কুলে শিক্ষার্থীরা বিল এবং মেলিন্ডা গেটস দম্পতির কাছে জানতে চেয়েছিল, তাঁদের কাছে যদি একটি অতি মানবীয় শক্তি থাকত, তবে সেটি কী হতো? ফেসবুেক নিজের পেজে এক চিঠিতে সেই উত্তর দিয়েছেন বিল গেটস।
আমাদের যদি কোনো অতি মানবীয় শক্তি বা সুপারপাওয়ার থাকত, তবে তা কী হতো? কেনটাকির উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মেলিন্ডা এবং আমাকে এই প্রশ্নটি করেছিল। আমাদের উত্তরটা হয়তো সুপারহিরো ভক্তদের মন পুরোপুরি জয় নাও করতে পারে। আমরা শুধু চেয়েছিলাম আমাদের ব্যস্ত জীবনের সবকিছু গুছিয়ে করার জন্য আরও শক্তি এবং সময়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী শত কোটি পরিবারের কাছে শক্তি এবং সময়ের চ্যালেঞ্জটা আমাদের চেয়ে আলাদা। এ থেকে তারা নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কেও ভালো ধারণা পায়। এ কথা মাথায় রেখেই আমরা আমাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনায় রেখেছি।
কল্পনা করুন, শক্তিশূন্য একটি জীবন। একটি বৈদ্যুতিক বাতি, মোবাইল ফোন, কিংবা ফ্রিজ চালানোর শক্তিটুকুও নেই। বিশ্বের প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ এমন এক অবস্থায় আছে, যা কল্পনাতীত। এটাই বিশ্বের ১৮ শতাংশ জনসংখ্যার দৈনন্দিন জীবন।
এক কথায় বলতে গেলে বলা যায়, ‘সবার জন্য সব সময় জীবন ভালো কাটে না। বেশির ভাগের জন্য অধিকাংশ সময়ই এমন।’ এর পেছনে দায়ী মূলত শক্তি। শত-সহস্র বছর ধরে মানুষ কাঠ-কয়লা পুড়িয়ে শক্তি পেয়েছে। তবে আঠারো শতক থেকে কয়লার ব্যবহার জীবনকে দ্রুততার সঙ্গে সহজ করেছে। এখনো অনেক দরিদ্র মানুষ শক্তি ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। কাজেই আমরা যদি বিশ্বের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে চাই, তাহলে আমাদের শক্তির এমন উৎস খুঁজে বের করতে হবে, যা তারা সহজেই পেতে পারে। এমনভাবে এই কাজটা করতে হবে, যেন জলবায়ুর পরিবর্তনকে আরও গুরুতর করে না তোলে। কারণ, তাহলে তারা আরও বিপদে পড়ে যাবে।
আরও কম দামি শক্তি উৎপন্ন করতে হলে আমাদের সৌর ও বায়ুশক্তির মতো সহজলভ্য মাধ্যমে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নতুন নতুন ধারণা নিয়ে ভাবতে হবে। কিছু বিক্ষিপ্ত ধারণাও আসবে, কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি, আগামী ১৫ বছরের মধ্যেই বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা এই বিষয়ে বিপ্লব ঘটিয়ে দেবেন। কার্বন নিঃসরণ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি আনা সম্ভব হবে এবং শক্তিকে সবার জন্য আরও সহজপ্রাপ্য করা সম্ভব হবে। প্রায় ১০০ কোটি মানুষের দিনের অনেকটা সময়ই চলে যায় নিত্যদিনের প্রয়োজনে কাঠ এবং পানি সংগ্রহ করতে। এই সময় নষ্ট করার কাজগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরাই করে থাকে। এই অমানসিক পরিশ্রম এবং বোঝা বাড়ানো ঠিক নয়। উন্নয়নের পথেও এটা অনেক বড় বাধা।
শক্তি এবং সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। বিশ্বকে আরও উন্নত করতে হলে কী কী করা উচিত? জানান আপনার মতামত। সঙ্গে থাকুন আমাদের। (সংক্ষেপিত)
অনুবাদ: দেব দুলাল গুহ

রাজস্থানের পাহাড়ে দুধের ঝর্ণা!

x

Decrease font Enlarge font
ঢাকা: পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসছে শুভ্রধারা, আর এ ধারা স্বর্গবাসীর উপভোগ করার কথা থাকলেও বিস্ময়ভরে তা উপভোগ করেছেন জগতেরই বাসিন্দারা। জগতের বাসিন্দা হয়ে দুধের ঝর্ণা উপভোগের এই সৌভাগ্য লাভ করলেন ভারতের রাজস্থানের বাসিন্দারা।

পানিতে রঙ মাখানো অথবা রাসায়নিক কোনো কারসাজি নয়, সত্যি সত্যিই রাজস্থানের বাসিন্দারা দুধের ধারা দেখলেন!

আসলে কী ঘটেছে রাজস্থানে? স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, সোমবার ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সিরোহির পাহাড়ি অঞ্চলে বেশ কিছুক্ষণ দুধের ঝর্ণাধারা উপভোগ করেন স্থানীয়রা। কোনো দৈব ব্যাপার নয়, আকস্মিকভাবেই ঘটনার সূত্রপাত।
Milk_River_1
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দিন সকালে সিরোহির বাহারিঘাটা অঞ্চলে পাহাড়ি সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় একটি ট্যাঙ্কার। সঙ্গে সঙ্গে ট্যাঙ্কারটিতে ভর্তি থাকা দুধ গড়িয়ে পড়ে পাহাড়ের কোল বেয়ে।
Milk_River_2
গুজরাটের একটি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে ২৫ হাজার লিটার দুধ নিয়ে রাজস্থানেই আসছিল ওই ট্যাঙ্কারটি। আর পথেই ঘটে গেলো এ বিস্ময়কর দুর্ঘটনা।

প্রথমে বিস্ময়ের ঘোরে থাকলেও পরে বালতি, ড্রাম আর ক্যান নিয়ে দুধ সংগ্রহে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন স্থানীয়রা। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই লেগে যায় ‘পাহাড়ি দুধের ঝর্ণা’ থেকে দুধ সংগ্রহের মহোৎসব। একসময় আসল ঘটনা জানতে পেরে সবার বিস্ময় কাটে।
Milk_River_3
অন্যদিকে, বেশ কিছুক্ষণ পর খবর পেয়ে উদ্ধারকারী ক্রেন এসে রাস্তায় উল্টে থাকা ট্যাঙ্কারটি সরিয়ে নিয়ে পাহাড়ি সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

পরনিন্দাকারীর জন্য জান্নাতের দরজা বন্ধ




ইসলামে গীবত বা পরনিন্দা করাকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বলে ঘোষণা করে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত শোনাও অন্যায়। সুতরাং গীবত যে রকম পাপ, শ্রবণ করাও তেমনি পাপ। অথচ এই পাপের কাজটি চায়ের আসর থেকে শুরু করে স্বাভাবিক আলাপচারিতায় যেন স্বভাবসুলভ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, এখন তো কোনো বৈঠক গীবত ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়!

অনেকেই তো পরনিন্দাকে পাপ বা নিষিদ্ধ কোনো কিছু বলে মনেই করেন না। অথচ গীবত একটি জঘন্যতম পাপ। মদপান, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদি থেকেও মারাত্মক ও নিকৃষ্টতম। কেননা এসব পাপ তওবার দ্বারা ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু গীবতকারীর পাপ শুধু তওবা করলেই তা মাফ হবে না, বরং যার বিরুদ্ধে গীবত করা হয়েছে সে ব্যক্তি যদি মাফ করে তাহলেই আল্লাহর কাছে মাফ পাওয়া যাবে।

গীবত আরবি শব্দ। যার অর্থ পরনিন্দা। ইসলামের পরিভাষায় কারও অনুপস্থিতিতে তার কোনো দোষ-ত্রুটি অন্যের কাছে আলোচনা করাই গীবত। যদিও তার মধ্যে ওই দোষগুলো বিদ্যমান থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক সাহাবীর প্রশ্নের জবাবে বলেন- ‘গীবত হচ্ছে যা শুনলে তোমার ভাইয়ের খারাপ লাগবে, তা নিয়ে আলোচনা করার নামই গীবত।’ এতে ওই সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করেন, আমি যা বলছি তা যদি ওই ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবু কি তা গীবত হবে? তখন মহানবী (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘যদি তার মধ্যে ওই দোষগুলো থাকে তাহলেই তো গীবত হবে আর তা না থাকলে সেটা হবে তোহমত যার অর্থ অপবাদ।’

পবিত্র কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফে গীবত সম্পর্কে কঠোর ভাষায় হুশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে বারবার। মহান আল্লাহতায়ালা সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপের কাজ। তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে গীবত করো না।’

নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউই কারও গীবত করবে না। গীবত করলে তোমরা ধ্বংস হবে।’ মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা গীবত থেকে বেঁচে থাকো। কারণ তাতে তিনটি ক্ষতি রয়েছে-

১. গীবতকারীর দোয়া কবুল হয় না, ২. গীবতকারীর কোনো নেক আমল কবুল হয় না ও ৩. আমলনামায় তার পাপ বৃদ্ধি হতে থাকে।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি কারও দোষ বর্ণনা করতে ইচ্ছা করো তখন নিজের দোষের কথা স্মরণ করো। যদি নিজের দোষ না দেখে শুধু অন্যের দোষই বর্ণনা করতে থাকো তাহলে আখেরাতে আল্লাহও তোমার দোষ প্রকাশ করবেন।’

কোরআন ও হাদিসে গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যেভাবে মৃত ব্যক্তির গোশত কেটে ভক্ষণ করা হলে মৃত ব্যক্তির কোনো কষ্ট হয় না, তেমনি কারও গীবত করা হলে সে অনুপস্থিত থাকায় তারও কোনো কষ্ট হয় না। এভাবে মৃত ব্যক্তির গোশত ভক্ষণ অত্যন্ত খারাপ ও নিকৃষ্ট কাজ, যা মানুষের রুচি বিরুদ্ধ। ঠিক গীবতও এ রকম।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা গীবত করবে এরা ইহকালে যদিও ভালো ভালো নেক আমল করে, রোজা রাখে বা অন্যান্য ইবাদত করলেও এদের পুলসিরাত অতিক্রম করতে দেওয়া হবে না। বরং তাদেরও বলা হবে- তোমরা গীবতের কাফ্‌ফারা না দেওয়া পর্যন্ত সামনে এগুতে পারবে না।’

অথচ পুলসিরাত অতিক্রম না করে কারও পক্ষেই জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বোঝা গেল, গীবতকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

জাহান্নামে গীবতকারীদের দেহ থেকে গোশত ঝরে পড়বে। এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কঠিন শাস্তি ও দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে মানুষের নিন্দা করে থাকে।’ প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, আগুন যত দ্রুত শুষ্ক কাঠকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। গীবত তার চেয়েও অতি দ্রুত বান্দার নেক আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।’

গীবত বা পরচর্চা নামাজ-রোজা বাদ দেওয়ার চেয়েও নিকৃষ্টতম। গীবত বর্তমানে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েজ যেমন-
১. অত্যাচারী জালেম শাসকের সম্পর্কে গীবত করা যাবে।
২. কারও দোষ দূর করার জন্য গীবত করাতে কোনো অসুবিধা নেই।
৩. কোনো ব্যক্তিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য বা পাপ কাজ থেকে লজ্জা দেওয়ার জন্য গীবত করা যাবে।
৪. কাউকে কোনো ভালো শিক্ষা ও সৎ পথে আনার উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির গীবত করা যাবে।
৫. দ্বীন ইসলামের প্রতি উৎসাহী করার জন্য গীবত করাও বৈধ।
৬. কেউ যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে কারও কাছে পাত্র বা পাত্রীর সম্পর্কে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করে বা জানতে চায়। তাহলে নিয়ম হলো- দোষ-ত্রুটি থাকলে তা বলে দেওয়া। তা গীবত হবে না। কারণ ওই পাত্র বা পাত্রীর দোষ-ত্রুটি এখন না বললেও বিয়ের পরে যখন প্রকাশ পাবে তখন দাম্পত্য জীবনে অনেক ফেৎনা-ফ্যাসাদ ও ঝগড়া-বিবাদ হতে পারে।

আমাদের পুরোপুরি ধর্মীয় জ্ঞান না থাকার কারণে দৈনন্দিন কতই না পরনিন্দা করে যাচ্ছি। আর এ নিন্দার মাধ্যমে পরস্পরের দোষচর্চা হয়ে থাকে বলে তাকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়তই জন্ম নিচ্ছে হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, আর তা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ঝগড়া-বিবাদ, হানাহানিসহ বিভিন্ন ফেৎনা-ফ্যাসাদ। এর মাধ্যমে পরস্পরের আত্মবিশ্বাস ও সহমর্মিতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শত্রুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সমাজে, যার ফলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবন হয়ে ওঠে অশান্ত ও গ্লানিময়।

অতএব, আমাদেরসবার উচিত অন্যের দোষ-ত্রুটি অপরের কাছে আলোচনা না করে নিজের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করে তা সংশোধন করতে সচেষ্ট থাকা। তাহলে পরনিন্দা করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।

Wednesday, February 24, 2016

আমার মায়ের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন

আমার মায়ের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন, আল্লাহ যেন আমার মা‘কে দুনিয়া ও আখিরাতে সব সময় সুখী রাখেন। কোন দুঃখ কষ্ট যেন আমার মা‘কে ছুঁতে পারে না।
আমিন, আমিন, ইয়া রাব্বুল আল-আমিন।

মায়ের মর্যাদা..............

মায়ের মর্যাদা..............
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর কাছে আরয করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)!
আমার থেকে কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী সৌজন্যমূলক আচরণ পাওয়ার অধিকারী?
রাসুল (সা.) বললেন, তোমার ‘মা’।
লোকটি বলল, তারপর কে?
রাসুল (সা.) বললেন, তোমার ‘মা’।
লোকটু পুনরায় জানতে চাইলো তারপর কে?
রাসুল (সা.) বললেন, তোমার ‘মা’।
লোকটি আবারও জানতে চাইলো, তারপর কে? রাসুল (সা.) বললেন, তোমার ‘বাবা’।
(বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিম শরীফের আরেকটি বর্ণনায় আসছে, রাসুল (সা.) বললেন- তোমার মা, অতপর তোমার মা, অতপর তোমার মা, অতপর তোমার পিতা। তারপর তোমার নিকটতম আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব পর্যায়ক্রমে তোমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী।
মেশকাত, হাদীস নং-৪৬৭১/১
ব্যাখ্যা ও শিক্ষাঃ হাদীসটির ব্যাখায় মোহাদ্দেসীনে কেরামগণ বলেন, মায়ের কথা তিনবার বলার কারণ হলো
১. মা তার সন্তানকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন।
২. জীবনের ঝুকি নিয়ে সন্তানকে প্রসব করেন।
৩. চব্বিশটি মাস নিজের বুকের দুধ পান করান।
...........কেহ কেহ বলেছেন,
সন্তান তার মায়ের পেটে তিনটি পর্দার ভিতর থাকে এবং যখন মা তাকে প্রসব করেন তখন এ
তিনটি পর্দা ভেদ করে সে দুনিয়াতে আসে। এ জন্য মায়ের ক্ষেত্রে বেশী অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
হাদীসে আল্লাহর রাসুল (সা.) আরো বলেন.....‘‘মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত।”
মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদীসে বলা হয়েছে... রাসুল (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে পেল অথবা তাদের যে কোন একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেল, অথচ (খেদমত করে সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না, তার নাক ধুলায় মলিন হোক (অর্থাৎ সে ধ্বংস হোক)।”
অন্য জায়গায় রাসুল (সা.) মায়ের দিকে নেক নজরে তাকালে কবুল হজ্জের সাওয়াবের কথা বলেছেন।
এমনকি সন্তান যদি প্রতিদিন একশতবার মায়ের দিকে নেক নজরে সাওয়াবের আশায় তাকায়,
আল্লাহ তাকে একশত হজ্জের সাওয়াব দান করবেন বলা হয়েছে।
অথচ বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করা যায় সাধারণ ব্যাপারে সন্তান তার বাবা-মাকে কষ্ট দেয়।
বাবা-মায়ের উপর তার স্ত্রী বা সন্তানদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। স্ত্রীর অধিকার কিংবা সন্তানের
অধিকার বা হক সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। আজ যদি আমি আমার বাবা-মাকে সম্মান না করি,
তাদের চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ না করি, তাহলে কিভাবে আমি আমার সন্তানের কাছ থেকে একসময়
এমন ব্যবহার পাওয়ার আশা করতে পারি?
আজ আমি আমার সন্তানকে নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়াই,
দিন-রাত পরিশ্রমের মাধ্যমে সন্তানের যত্ন নেই, সন্তানের একটু অসুখ করলে নিজের
ঘুম হারাম করে তার সেবা করি, সন্তানের একটু মুখের হাসি আমার মনে প্রশান্তি এনে দেয়,
তাহলে আমরা কেন একটু চিন্তা করি না যে, আমরাও একসময় ছোট ছিলাম। আমাদেরকে আমাদের বাব-মা এভাবে বা এর চেয়েও বেশী আদর, স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালবাসা দিয়ে,
আর বিভিন্ন রকম ত্যাগ স্বীকার আর দুখ-কষ্ট সহ্য করে বড় করেছেন।
কেন তাদের ব্যাপারে একটু চিন্তা করি না? কেন? কেন? কেন?
আমরা এগুলো অনকে জানি কিন্তু সিবের মোহে যেন মানতে চাইনা বা মানতে পারি না।
তাই আসুন, আজ থেকে প্রতিজ্ঞাব্ধ হই, কোন অবস্থাতেই পিতা মাতার অবাধ্য হবো না। কারন,
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া কবীরা গুণাহ। তাদের সকল কথাগুলো আমরা যথাসাধ্য
পালন করার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ!!!
আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের পিতা-মাতার খেদমত করে সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর ভালবাসা পাওয়ার ও চুড়ান্ত গন্তব্যস্থল জান্নাত লাভের তাওফীক দান করুন। আমীন।

মা এর সম্মান নিয়ে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) এর একটি ঘটনা


একদিন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসুল (সাঃ)
এর নিকট এসে কাঁদছেন। রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,
হে আবু হোরায়রা তুমি কেন কাঁদছ? আবু
হোরায়রা বললেন, আমার মা আমাকে মেরেছেন। রাসুল
(সাঃ) বললেন, কেন তুমি কি কোন বেয়াদবী করেছ? আবু
হোরায়রা বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবী করিনি।
আপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার রাত হয়েছিল
বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায়
আমি আপনার কথা বললাম। আর আপনার
কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারধর করল আর বলল, হয়ত
আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ (সাঃ) এর
দরবার ছাড়বি। আমি বললাম, ও আমার মা।
তুমি বুড়ি মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত
শক্তি দিয়ে মারতে থাকো।
মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। তবুও
আমি আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না। তখন রাসূল
(সাঃ) বলেছেন, তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন
আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? আমার
তো এখানে কিছুই করার নেই। হযরত আবু
হোরায়রা (রাঃ) বললেন, হে রাসূল (সাঃ) আমি আমার
মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই। রাসুল
(সাঃ) বললেন, তাহলে কেন এসেছ? আবু
হোরায়রা বললেন, আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী।
আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য
দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত
করেন। আর তখনই সাথে সাথে রাসুল (সাঃ) হাত
উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ!
আমি দোয়া করি আপনি আবু হোরায়রার
আম্মাকে হেদায়েত করে দেন।” রাসুল (সাঃ)
দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির
দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন লোক আবু
হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো, হে আবু
হোরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন? তখন আবু
হোরায়রা বললেন, ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার
জামা ছেড়ে দাও। আমাকে দৌড়াতে দাও।
আমি দৌড়াইয়া বাড়িতে গিয়ে দেখতে চাই
আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির
দোয়া আগে পৌঁছে গেছে। হযরত আবু হোরায়রা দরজায়
নক করতে লাগলো। ভিতর থেকে তার মা যখন
দরজা খুললো তখন আবু হোরায়রা দেখলেন তার মার
সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। তখন
মা আমাকে বললেন, হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার
পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি।
মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ
জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায়
পড়েছি তোমাকে মেরে। হে আবু হোরায়রা! আমি গোসল
করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল (সাঃ) এর
দরবারে নিয়ে চল। আর তখনই সাথে সাথে আবু
হোরায়রা তার মাকে রাসুল (সাঃ) এর
দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মাকে সেখানেই
কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন।
পিতা মাতা জান্নাতে র মাঝের দরজা। যদি চাও,দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো,নতুবা তা সংরক্ষণ করতে পারো ।
সুবহানআল্লাহ ।
[তিরমিজি ]

Tuesday, February 23, 2016

শহীদদের স্মরণে করণীয়



মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক,

জ্ঞানীরা বলেন, দু’টি ঋণ কখনও পরিশোধ করা যায় না। একটি মায়ের দুধের ঋণ, অন্যটি শহীদদের রক্তের ঋণ। অনেক কিছু করার পরেও এ দেনা থেকে যায়। অনেক কিছু এখানে কিছুই নয়। জনমভর করে যেতে হয় তাদের স্মরণ।

যারা আমাদের ভাষার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে রক্তপিপাসু বন্দুকের নলের সামনে বুক টান করে দাঁড়িয়েছিল আমরা তাদের ভুলতে পারি না। তারা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। তারা আমাদের গর্ব। তারা আমাদের অহংকার। তাদের ত্যাগের কথা, তাদের অবদানের কথা, তাদের ঋণের কথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া, তাদের স্মরণীয় করে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

এ গুরুদায়িত্ব পালনের ধরন বিভিন্ন হতে পারে। তবে সবচেয়ে সুন্দর হয়- সকল বীর শহীদের নামে, তাদের স্মরণে মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, বৃহৎ সেতু ও ওভার ব্রিজসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা।

এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে জাতীয় শহীদদের স্মরণের জন্য বরাদ্দ হওয়া কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও স্থাপনা প্রত্যক্ষভাবে জনগণকে সারাবছর উপকৃত করবে। এ সব কিছু সরাসরি জনস্বার্থে ব্যবহার হবে। সেবা গ্রহণ করতে আসা জনগণের উপস্থিতিতে শহীদদের স্মরণ হবে আরও অনেক বেশি সতেজ, প্রাণবন্ত ও সার্থক।

সেবাপ্রার্থীদের আসা-যাওয়া জাতিকে প্রতিদিন শহীদদের কথা স্মরণ করাবে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার দ্বারা শহীদরা জীবিতকালের লালিত ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যু পরবর্তী জীবনেও উপকৃত হবেন।

আমাদের জাতি বিনির্মাণে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ধর্মবিশ্বাসে মুসলমান। মুসলমানরা মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে পরকাল নামে বিশ্বাস করেন। পরকালের সুখ-শান্তিকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। পবিত্র হাদিসের ভাষ্যমতে, মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সে পানিতে হাবুডুবু খেতে থাকা ব্যক্তির মতো বিপদসঙ্কুল অবস্থায় জীবিতদের অপেক্ষায় থাকে। কোনো জীবিত ব্যক্তি তার কোনো উপকার করে কি-না। সে নিজে নিজের উপকারের জন্য কিছুই করতে পারে না। জীবিতরা যদি তার জন্য দোয়া, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, তার জন্য দান-সদকা করে- তবে তার বিদেহী আত্মার উপকার হয়।

মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী অন্য কিছু দ্বারা মৃত ব্যক্তির আত্মার উপকার হয় না। তাই শহীদদের নামে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপনা করার দ্বারা তাদের বিশ্বাসের আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায় তাদের পরকালীন জীবনে উপকার হবে। তাদের আত্মার উপকার হবে। তাদের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। তারা তাদের পরকালীন জীবনে শান্তিতে থাকবে। তারা যেখানে আছেন, সেখানে আরামে থাকবেন।

শহীদদের স্মরণে মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল, সেতু ইত্যাদি স্থাপন করার দ্বারা তাদের স্মরণ অম্লান থাকবে এবং পরকালীন জীবনে তারা লাভবান হবেন। আর তাদের যাপিত জীবনের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করা হবে। যারা আমাদের জন্য, আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে পরকালে চলে গেছেন- আমরা তো আর কোনোভাবেই উপকার করতে পারব না। সেক্ষেত্রে তাদের ধর্মবিশ্বাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এমন কিছু করাটা কি আমাদের বিবেক ও নৈতিকতার দাবি নয়, যা তাদের পরকালীন জীবনকে উপকার করবে?

হজে যাওয়ার আগে জানা জরুরি


x

Decrease font Enlarge font
রিয়াদ: হজ সামর্থবান মুসলমানদের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত। হজের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অনেককেই বিভ্রান্তির শিকার হতে দেখা যায়। সে কারণে হজের পূর্বে ও হজে থাকাকালীন হজের বিধি-বিধান সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

হজের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে করণীয় কিছু বিষয় আমার লেখার মাধ্যমে বাংলানিউজের পাঠকদের জানানোর চেষ্টা করবো। (লেখাটি দুই পর্বে প্রকাশিত হবে। আজ প্রথম পর্ব)

প্রথম পর্ব 

হজ করার জন্য প্রথম যে কাজটি আপনাকে করতে হবে সেটি হলো মানসিক প্রস্তুতি। হজ হলো দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত। শ্রমসাধ্য ব্যাপার। তাই যাত্রার শুরুতেই নিজেকে এমনভাবে তৈরি করে নিতে হবে, যেন দেহ-মনে বেশি কষ্ট না হয়। এজন্য মালপত্র যতোটা সম্ভব হালকা রাখতে হবে। কারণ নিজের মালপত্র নিজেকেই বহন করতে হবে। সঙ্গীদের সম্মান করতে হবে। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। গ্রুপের দুর্বল বয়স্কদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। সৌদি আরবে পৌঁছে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ পবিত্র কাবা শরিফে জামায়াতের সঙ্গে আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। কাবা শরিফের খুব কাছেই ভাড়া করা বাড়িতে হাজিদের বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক এজেন্সি বেশি টাকা আদায় করলেও বাংলাদেশের বেশির ভাগ এজেন্সিই অধিক মুনাফার আশায় হারাম শরীফ থেকে অনেক দূরে হাজিদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন। সেক্ষেত্রে এজেন্সির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ভালো করে বোঝাপড়া করে নিতে, তারা যেন কাবা শরিফের কাছেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করে। কাবা শরিফের কাছে কিংবা দূরে, যেখানেই বাসা হোক, যেকোনো প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে হলে অবশ্যই মুয়াল্লিমকে (হজ গাইড) বলে বের হতে হবে। চলাফেরায় একে অন্যের সহযোগিতা নিন। আপনি হজ পালনে সৌদি আরব যাচ্ছেন। দেশটির মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলে। রাস্তাঘাটও অচেনা। তবে এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। হজ যাত্রীদের সেবা করতে সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সরকার নানা রকম ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আপনি হারিয়ে গেলেও হারিয়ে যেতে পারবেন না। সঙ্গে কাগজপত্র থাকলেই হলো।

ঢাকার আশকোনা হাজি ক্যাম্পে টিকা দেওয়া হয়। সেখানে হজের প্রশিক্ষণ, বৈদেশিক মুদ্রা কেনা-বেচাসহ হজ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সব কিছুই পাওয়া যায়। বিমানে ওঠার আগে হাজি ক্যাম্পে অবস্থানকালে মালপত্র খেয়াল রাখতে হবে। একদল সুযোগ সন্ধানী লোক মালপত্র চুরি করে থাকে। কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়া বাকি থাকলে অবশ্যই তা নিয়ে নিতে হবে।

তবে যাত্রার আগেই কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, তা না হলে শেষ মুহূর্তে হজযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

পাসপোর্ট, বিমানের টিকেট সংগ্রহ ও হজ ফ্লাইটের তারিখ এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিতকরুন। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। সেই সঙ্গে নিয়ম মেনে ম্যানিনজাইটিস টিকা বা অন্যান্য ভ্যাকসিন দিয়ে নিন। অনেকে টিকা না নিয়ে স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করেন, এটা করবেন না।

হজের কোনো বিষয়ে বিভিন্ন রকম আমল দেখলে ঝগড়া করবেন না। আপনার মুয়াল্লিমের ওপর আস্থা রাখুন, তার নির্দেশনা মেনে আমল করবেন। এরপরও অস্থিরতা অনুভব করলে প্রয়োজনে পরিচিত অথবা এলাকার গ্রুপ লিডারের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।
হজে যাওয়ার সময় কি কি মালপত্র নিয়েছেন একটু মিলিয়ে নিন।
১. পাসপোর্ট, টিকেট, ডলার ও টাকা রাখার জন্য গলায় ঝুলানো ছোট ব্যাগ।
২. ইহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট। প্রতি সেট শরীরের নিচের অংশে পরার জন্য আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ কাপড়। ইহরামের কাপড় হবে সাদা। সূতি হলে ভালো হয়।
৩. নরম ফিতাওয়ালা স্পঞ্জের স্যান্ডেল।
৪. ইহরাম বাঁধার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হলে বেল্ট।
৫. গামছা ও তোয়ালে।
৬. নিজের পছন্দ অনুযায়ী আরামদায়ক পোশাক যেমন লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা ও পাঞ্জাবি সঙ্গে নিতে পারেন। মেয়েরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী আরামদায়ক পোশাক নিতে পারবেন। 
৭. সাবান, টুথপেস্ট, ব্রাশ ও মিসওয়াক।
৮. সুই-সুতা ও নখ কাটার জন্য নেইল কাটার ।
৯. থালা, বাটি ও গ্লাস।
১০. কাগজ-কলম।
১১. শীতের কাপড়। কারণ মদিনায় ঠাণ্ডা পড়ে বেশি।
১২. প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। ওষুধ কিছু বেশিও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র সঙ্গে রাখুন।
১৩. চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত একটি চশমা, কারণ ভিড় বা অন্য কোনো কারণে ভেঙে গেলে ব্যবহার করতে হবে।
১৪. বাংলাদেশি টাকা, কারণ দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য প্রয়োজন হয়।
১৫. নারীদের জন্য বোরকা বা পর্দা হয় এমন পোশাক।
১৬. মালপত্র নেওয়ার জন্য ব্যাগ অথবা সুটকেস, তালা-চাবিসহ। ব্যাগের ওপর ইংরেজিতে নিজের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লিখতে হবে। এর বাইরেও আরো কিছু প্রয়োজনীয় মনে হলে তা নিয়ম মেনে সঙ্গে নিন।
এছাড়াও সৌদি আরবের জেদ্দা, মক্কা ও মদীনায় বাংলাদেশ হজ মিশন কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে হাজিদের সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে থাকে। এই কন্ট্রোল রুমগুলো হাজিদের হারানো লাগেজ ফিরিয়ে দেওয়া, চিকিৎসা সেবা, টাকা পয়সা জমা রাখা, পথ ভুল করে হারিয়ে যাওয়া হাজিদের নির্দিষ্ট হোটেলে পৌঁছে দেওয়াসহ ২৪ ঘণ্টা হাজিদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন।

ইহরাম:

প্রথমেই জেনে নিন আপনার গন্তব্য ঢাকা থেকে মক্কা নাকি মদীনা। যদি মদীনা হয় তাহলে ঢাকা থেকে ইহরাম বাঁধার প্রয়োজন নেই। যখন মদীনা থেকে মক্কা যাবেন তখন ইহরাম বাঁধতে হবে।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ হজযাত্রী আগে মক্কায় যান। এ ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার আগে ইহরাম বাঁধা ভালো। কারণ, জেদ্দা পৌঁছার আগেই ‘‘ইয়ালামলাম’’ মিকাত বা ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থানটি পড়ে। যদিও বিমানে ইহরাম বাঁধার কথা বলা হয়, কিন্তু ওই সময় অনেকে ঘুমিয়ে থাকেন। আর বিমানে পোশাক পরিবর্তন করাটাও দৃষ্টিকটু।

মনে রাখবেন ইহরামের কাপড় পরিধান করলেই ইহরাম বাঁধা হয়ে যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়ত করে ‘‘তালবিয়া’’ তথা ‘‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক, লা-শারিকা-লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি'মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারিকালাক।"  অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।

তাই ইহরামের কাপড় পরিধানের পর বিমান ছাড়ার পর নিয়ত করে তালবিয়া আরম্ভ করা ভালো। বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এজন্য দম বা কাফফারা দিতে হবে। তদুপরি গুনাহ হবে।

হজ বা উমরাহ পালনকারী ব্যক্তির জন্য বিনা ইহরামে যে নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করা নিষিদ্ধ, তা-ই হলো মিকাত। বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘরের সম্মানার্থে প্রত্যেককে নিজ নিজ মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়।

ঢাকা বিমানবন্দর:

উড্ডয়নের সঠিক সময় অনুযায়ী বিমানবন্দরে পৌঁছান। নাম-ঠিকানা লেখা ব্যাগ বা সুটকেসে কোনো পচনশীল খাবার রাখা ঠিক না। বিমানবন্দরে লাগেজে যে মাল দেবেন, তা ঠিকমতো বাঁধা হয়েছে কি না, দেখে নেবেন। বিমানের কাউন্টারে মাল রেখে এর টোকেন দিলে তা যত্ন করে রাখবেন। কারণ, জেদ্দা বিমানবন্দরে ওই টোকেন দেখালে সেই ব্যাগ আপনাকে ফেরত দেবে। ইমিগ্রেশন, চেকিংয়ের পর নিজ মালপত্র সযত্নে রাখুন।

জেদ্দা বিমানবন্দর:

মোয়াল্লেমের গাড়ি আপনাকে জেদ্দা থেকে মক্কায় যে বাড়িতে থাকবেন, সেখানে নামিয়ে দেবে। মোয়াল্লেমের নম্বর (আরবিতে লেখা) কব্জি বেল্ট দেওয়া হবে, তা হাতে পরে নেবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র (যাতে পিলগ্রিম পাস নম্বর, নাম, ট্রাভেল এজেন্টের নাম ইত্যাদি থাকবে) গলায় ঝোলাবেন।

জেদ্দা থেকে মক্কায় পৌঁছাতে আনুমানিক দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। যানবাহনের উঠানামার সময় ও চলার পথে বেশি বেশি তালবিয়া পড়ুন (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শরিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক লা-শরিকা লাক্।)

মক্কায় পৌঁছে:

মক্কায় পৌঁছে আপনার থাকার জায়গায় মালপত্র রেখে ক্লান্ত হলে বিশ্রাম করুন। আর যদি নামাজের ওয়াক্ত হয়, নামাজ আদায় করুন। বিশ্রাম শেষে উমরাহর নিয়ত করে থাকলে উমরাহ পালন করুন।

মসজিদুল হারামে (কা’বা শরিফ) অনেকগুলো প্রবেশপথ আছে; সব ক’টি দেখতে একই রকম। কিন্তু প্রতিটি প্রবেশপথে আরবি ও ইংরেজিতে ১, ২, ৩ নম্বর ও প্রবেশপথের নাম আছে, যেমন-বাদশা আবদুল আজিজ প্রবেশপথ। আপনি আগে থেকে ঠিক করবেন, কোন প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকবেন বা বের হবেন। আপনার সফরসঙ্গীকেও স্থান চিনিয়ে দিন। তিনি যদি হারিয়ে যান, তাহলে নির্দিষ্ট নম্বরের গেটের সামনে থাকবেন। এতে ভেতরে ভিড়ে হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে এসে সঙ্গীকে খুঁজে পাবেন।

কা’বা শরিফে স্যান্ডেল রাখার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকবেন, নির্দিষ্ট স্থান তথা জুতা রাখার জায়গায় রাখুন। এখানে-সেখানে জুতা রাখলে পরে আর খুঁজে পাবেন না। প্রতিটি জুতা রাখার র্যাকেও নম্বর দেওয়া আছে। এই নম্বর মনে রাখুন।

উমরাহর নিয়মকানুন আগে জেনে নেবেন, যেমন-সাতবার তাওয়াফ করা, জমজমের পানি পান করা, নামাজ আদায় করা, সাঈ করা (সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো-যদিও মসৃণ পথ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) মাথা মুড়ানো অথবা চুল ছোট করা-এসব কাজ ধারাবাহিকভাবে করা। ওয়াক্তীয় নামাজের সময় হলে যতোটুকু হয়েছে ওই সময় নামাজ পড়ে আবার বাকিটুকু শেষ করা।

কা’বা শরিফ:

হারাম শরিফে প্রবেশ করার সময় বিসমিল্লাহ ও দরুদ শরিফ পড়ার পর “আল্লাহুম্ মাফ তাহলি আব-ওয়া-বা রাহমাতিকা” পড়বেন। কোনো দরজার সামনে নামাজ পড়া ঠিক নয়, এতে পথচারীর কষ্ট হয়।

হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া সুন্নাত। তবে ভিড়ের কারণে না পারলে দূর থেকে চুমুর ইশারা করলেই চলবে। ভিড়ে অন্যকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

হজে যাওয়ার আগে জেনে নিন



x

Decrease font Enlarge font
রিয়াদ: সামর্থবান মুসলমানদের জন্য হজ একটি অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত। হজের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অনেককেই বিভ্রান্তির শিকার হতে দেখা যায়। সে কারণে হজের পূর্বে ও হজে থাকাকালীন হজের বিধি-বিধান সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

হজের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে করণীয় কিছু বিষয় আমার লেখার মাধ্যমে বাংলানিউজের পাঠকদের জানানোর চেষ্টা করবো। (আজ দুই পর্বের লেখাটির শেষ পর্ব প্রকাশিত হলো।)

উমরাহ হজ কি?

মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সাঈ করা ও মাথার চুল ফেলে দেওয়া বা ছোট করাকে উমরাহ বলে।

হজ তিন প্রকার-তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ।

হজ্জে তামাত্তু

হজের মাসসমূহে (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ ) উমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে, উমরাহ পালন করে, পরে হজের নিয়ত করে হজ পালন করাকে হজ্জে তামাত্তু বলে।

হজ্জে কিরান

হজের  মাসসমূহে একই সঙ্গে হজ ও উমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম করে উমরাহ ও হজ করাকে হজ্জে কিরান বলে।

হজ্জে ইফরাদ

শুধু হজ পালনের উদ্দেশে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদনকে হজ্জে ইফরাদ বলে।

তামাত্তু হজের নিয়ম

১. উমরাহর ইহরাম (ফরজ)

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে গোসল বা অজু করে নিন।
মিকাত অতিক্রমের আগেই সেলাইবিহীন একটি সাদা কাপড় পরিধান করুন, আরেকটি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিন।

শুধু উমরাহর নিয়ত করে এক বা তিনবার তালবিয়া পড়ে নিন।
তালবিয়া হলো-লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক।

২. উমরার তাওয়াফ (ফরজ)
অজুর সঙ্গে ইজতিবাসহ তাওয়াফ করুন। ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচের দিক থেকে পেঁচিয়ে এনে বাঁ কাঁধের ওপর রাখাকে ‘ইজতিবা’ বলে।
হাজরে আসওয়াদকে সামনে রেখে তার বরাবর ডান পাশে দাঁড়ান (২০০৬ সাল থেকে মেঝেতে সাদা মার্বেল পাথর আর ডান পাশে সবুজ বাতি)। তারপর দাঁড়িয়ে তাওয়াফের নিয়ত করুন। তারপর ডানে গিয়ে এমনভাবে দাঁড়াবেন, যেন হাজরে আসওয়াদ পুরোপুরি আপনার সামনে থাকে। এরপর দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলে-বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়া লিল্লাহিল হামদ, ওয়াস সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসুলিল্লাহ পড়ুন। পরে হাত ছেড়ে দিন এবং হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে ডান দিকে চলতে থাকুন, যাতে পবিত্র কা’বাঘর পূর্ণ বাঁয়ে থাকে। পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নাত। রমল অর্থ বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদম রেখে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা।

রুকনে ইয়ামানিকে সম্ভব হলে শুধু হাতে স্পর্শ করুন। রুকনে ইয়ামানিতে এলে বলুন-রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার, ওয়াআদখিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার, ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন। চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে চক্কর পুরো করুন।

পুনরায় হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন। এভাবে ৭ চক্করে তাওয়াফ শেষ করুন।

হাতে ৭ দানার তসবি অথবা গণনাযন্ত্র রাখতে পারেন। তাহলে ৭ চক্কর ভুল হবে না।

৩. তাওয়াফের দুই রাকা’আত নামাজ (ওয়াজিব)

মাকামে ইবরাহিমের পেছনে বা হারামের যেকোনো স্থানে তাওয়াফের নিয়তে (মাকরুহ সময় ছাড়া) দুই রাকা’আত নামাজ পড়ে দুআ করুন। মনে রাখবেন, এটা দোয়া কবুলের সময়।

৪. উমরাহর সাঈ  (ওয়াজিব)

সাফা পাহাড়ের কিছুটা উপরে উঠে (এখন আর পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত) কা’বা শরিফের দিকে মুখ করে সাঈ-এর নিয়ত করে, দোয়ার মতো করে হাত তুলে তিনবার তাকবির বলে দোয়া করুন। তারপর মারওয়ার দিকে রওনা হয়ে দুই সবুজ দাগের মধ্যে (এটা সেই জায়গা, যেখানে হজরত হাজেরা (রা.) পানির জন্য দৌড়েছিলেন) একটু দ্রুত পথ চলে মারওয়ায় পৌঁছালে এক চক্কর পূর্ণ হয়। মারওয়া পাহাড়ে উঠে কাবা শরিফের দিকে মুখ করে দোয়ার মতো করে হাত তুলে তাকবির পড়ুন ও আগের মতো চলে সেখান থেকে সাফায় পৌঁছালে দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হয়। এভাবে সপ্তম চক্করে মারওয়ায় গিয়ে সাঈ শেষ করে দোয়া করুন।

৫. হলক করা  (ওয়াজিব)

পুরুষ হলে রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদশের অনুসরণে সম্পূর্ণ মাথা মুণ্ডন করবেন, তবে মাথার চুল ছাঁটতেও পারেন। নারীরা মাথার চুল এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবেন।

এ পর্যন্ত উমরাহর কাজ শেষ।

হজের ইহরাম না বাঁধা পর্যন্ত ইহরামের আগের মতো সব কাজ করতে পারবেন।

৬. হজের ইহরাম (ফরজ)

হারাম শরিফ বা বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ জোহরের আগেই মিনায় পৌঁছে যাবেন।

৭. মিনায় অবস্থান (সুন্নাত)

৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করুন ও এ সময় মিনায় অবস্থান করুন।

৮. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান  (ফরজ)

আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। ৯ জিলহজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন। এদিন নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসরের নামাজ স্ব স্ব সময়ে আলাদাভাবে আদায় করুন। মুকিম হলে চার রাকাত পূর্ণ পড়ুন। মসজিদে নামিরায় উভয় নামাজ জামা’আতে পড়লে একসঙ্গে আদায় করতে পারেন। যদি ইমাম মুসাফির হন আর মসজিদে নামিরা যদি আপনার থেকে দূরে থাকে, তাহলে নিজ স্থানে অবস্থান করবেন। মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার দিকে রওনা হন।

৯. মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) ও রাত্রি যাপন (সুন্নত)

আরাফায় সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে এশার সময়ে মাগরিব ও এশা এক আজান ও এক ইকামতে একসঙ্গে আদায় করুন।
এখানেই রাত যাপন করুন (এটি সুন্নত) । ১০ জিলহজ ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবশ্যই অবস্থান করুন (এটি ওয়াজিব)। তবে দুর্বল (অপারগ) ও নারীদের বেলায় এটা অপরিহার্য নয়। রাতে ছোট ছোট ছোলার দানার মতো ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করুন। মুজদালিফায় কঙ্কর খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।

১০. কঙ্কর মারা (প্রথম দিন)

১০ জিলহজ ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধু বড় জামারাকে (বড় শয়তান) ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন (ওয়াজিব)। এ সময়ে সম্ভব না হলে এ রাতের শেষ পর্যন্ত কঙ্কর মারতে পারেন। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর মারা উত্তম ও নিরাপদ।

কঙ্কর মারার স্থানে বাংলা ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়; তা (বাংলা) মনোযোগ দিয়ে শুনুন ও মেনে চলুন।

১১. কোরবানি করা (ওয়াজিব)

১০ জিলহজ কঙ্কর মারার পরই কেবল কোরবানি নিশ্চিত পন্থায় আদায় করুন।

কোরবানির পরেই কেবল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের অনুসরণে মাথা হলক করুন (ওয়াজিব)। তবে চুল ছোটও করতে পারেন।

খেয়াল রাখবেন: কঙ্কর মারা, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা জরুরি ও ওয়াজিব, অন্যথায় দম বা কাফফারা দিয়ে হজ শুদ্ধ করতে হবে। বর্তমানে এই সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় হজ্জে ইফরাদ করা। যেখানে কোরবানি নেই।

হজের পরে কেউ উমরা পালন করতে চাইলে ১৩ তারিখ দিবাগত রাত থেকে উমরাহ পালন করতে পারবেন।

১২. তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)
১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারত করে নিতে হবে। তা না হলে ১২ জিলহজের পরে তাওয়াফটি করে দম দিতে হবে। তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করবেন।

১৩. কঙ্কর মারা (ওয়াজিব)
১১ ও ১২ জিলহজ কঙ্কর মারা (ওয়াজিব)। ১১-১২ জিলহজ দুপুর থেকে সময় আরম্ভ হয়। ভিড় এড়ানোর জন্য আসরের পর অথবা আপনার সুবিধাজনক সময়ে ৭টি করে কঙ্কর মারবেন-প্রথমে ছোট, মধ্যম, তারপর বড় শয়তানকে। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় শেষ করুন। সম্ভব না হলে শেষরাত পর্যন্ত মারতে পারেন। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই নিরাপদ।

১৪. মিনা ত্যাগ
১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে অথবা সন্ধ্যার পর ভোর হওয়ার আগে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতেই হবে-এটা ঠিক নয়। তবে সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম।

১৫. বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)

বাংলাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয় (ওয়াজিব)। তবে হজ শেষে যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে পরিণত হয়ে যায়।

নারীদের মাসিকের কারণে বিদায়ী তাওয়াফ করতে না পারলে কোনো ক্ষতি নেই; দম বা কাফফারাও দিতে হয় না।

১৬. মিনায় অবস্থানরত দিনগুলোতে (১০, ১১ জিলহজ) মিনায়ই রাতযাপন করুন। আর ১২ তারিখ রাতযাপন করুন যদি ১৩ তারিখ রমি (কঙ্কর ছুড়ে মারা) শেষ করে ফিরতে চান (সুন্নত)।

কিরান হজের নিয়ম

১. ইহরাম বাঁধা (ফরজ)
জেদ্দা পৌঁছানোর আগে একই নিয়মে ইহরাম করার কাজ সমাপ্ত করুন। তবে তালবিয়ার আগেই হজ ও উমরাহ উভয়ের নিয়ত একসঙ্গে করুন।
২. উমরাহর তাওয়াফ (পূর্বে বর্ণিত) নিয়মে আদায় করুন (ওয়াজিব)।

৩. উমরাহর সাঈ করুন, তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না; বরং ইহরামের সব বিধিবিধান মেনে চলুন (ওয়াজিব)।
৪. তাওয়াফে কুদুম করুন (সুন্নত)।
৫. এরপর সাঈ করুন, যদি এ সময় সাঈ করতে না পারা যায় তাওয়াফে জিয়ারতের পরে করুন (ওয়াজিব)।
৬. ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় পড়ুন। এ সময়ে মিনায় অবস্থান করুন (সুন্নত)।
৭. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন (ফরজ)।
৮. ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের পর থেকে মুজদালিফায় অবস্থান এবং মাগরিব ও এশা একসঙ্গে এশার সময়ে আদায় করুন (সুন্নত)। তবে ১০ জিলহজ ফজরের পর কিছু সময় অবস্থান করুন (ওয়াজিব)।
৯. ওপরে বর্ণিত নিয়ম ও সময় অনুসারে ১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপ করুন (ওয়াজিব)।
১০. কোরবানি করুন (ওয়াজিব)।
১১. মাথার চুল মুণ্ডন করে নিন (ওয়াজিব)। তবে চুল ছেঁটেও নিতে পারেন।
১২. তাওয়াফে জিয়ারত করুন (ফরজ) ও সাঈ করে নিন, যদি তাওয়াফে কুদুমের পরে না করে থাকেন।
১৩. ১১-১২ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপ করুন (ওয়াজিব)। ১৩ জিলহজ কঙ্কর মারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ।
১৪. মিনায় থাকাকালীন মিনায়ই রাতযাপন করুন (সুন্নত)।
১৫. মিকাতের বাইরে থেকে আগত হাজিরা বিদায়ী তাওয়াফ করুন (ওয়াজিব)।

ইফরাদ হজের নিয়ম

১. শুধু হজের নিয়তে (আগে বর্ণিত) ইহরাম বাঁধুন (ফরজ)।
২. মক্কা শরিফ পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম করুন (সুন্নত)।

৩. সাঈ করুন (ওয়াজিব)। এ সময়ে সম্ভব না হলে সাঈ তাওয়াফে জিয়ারতের পরে করুন।

৪. মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রাতযাপন করুন (সুন্নত)।

৫. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন (ফরজ)।

৬. মুজদালিফায় অবস্থান করুন (সুন্নত)। তবে ১০ জিলহজ ফজরের পর কিছু সময় অবস্থান ওয়াজিব।

৭. ১০ জিলহজ জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করুন (ওয়াজিব)।

৮. যেহেতু এ হজে কোরবানি ওয়াজিব নয়, তাই কঙ্কর নিক্ষেপের পর মাথা হলক করে নিন; তবে চুল ছেঁটেও নিতে পারেন (ওয়াজিব)।

৯. তাওয়াফে জিয়ারত করুন (ফরজ) ও যদি তাওয়াফে কুদুমের পর সাঈ না করে থাকেন, তাহলে সাঈ করে নিন (ওয়াজিব)।
১০. ১১-১২ জিলহজ আগে বর্ণিত নিয়ম ও সময়ে কঙ্কর নিক্ষেপ করুন (ওয়াজিব)।

১১. বদলি হজকারী ইফরাদ হজ করবেন।

ইহরাম, অন্যান্য পরামর্শ

ইহরাম সম্পর্কে জরুরি বিষয়:

যারা সরাসরি বাংলাদেশ থেকে মক্কা শরিফ যাবেন, তারা বাড়িতে, হাজি ক্যাম্পে বা বিমানে ইহরাম করে নেবেন। বাড়িতে বা হাজি ক্যাম্পে ইহরাম করে নেওয়া সহজ। ইহরাম ছাড়া যেন মিকাত অতিক্রম না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

যারা মদিনা শরিফ যাবেন, তারা মদিনা শরিফ থেকে মক্কা যাওয়ার সময় ইহরাম করবেন। কোনো নারী প্রাকৃতিক কারণে অপবিত্র হয়ে থাকলে ইহরামের প্রয়োজন হলে অজু-গোসল করে নামাজ ব্যতীত লাব্বাইক পড়ে ইহরাম করে নেবেন। তাওয়াফ ছাড়া হজ, উমরাহর সমস্ত কাজ নির্ধারিত নিয়মে আদায় করবেন।

তাওয়াফ ও সাঈ করার সময় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তাওয়াফের সময় অজু থাকা জরুরি। তবে সাঈ করার সময় অজু না থাকলেও সাঈ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া একটি সুন্নত। তা আদায় করতে গিয়ে লোকজনকে ধাক্কাধাক্কির মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বড় গুনাহ। তাই তাওয়াফকালে বেশি ভিড় দেখলে ইশারায় চুমু দেবেন।

সাঈ করার সময় সাফা থেকে মারওয়া কিংবা মারওয়া থেকে সাফা প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চক্কর। এভাবে ৭টি চক্কর সম্পূর্ণ হলে একটি সাঈ পূর্ণ হবে।

উপকারী কয়েকটি দোয়া


x

Decrease font Enlarge font
দুনিয়ার বুকে মানুষের উপকার হয় ও বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়- এমন অনেক দোয়া পবিত্র কোরআনে কারিম ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। দোয়াগুলো খুবই ছোট তাই সহজে মুখস্থ করা যায়। পাঠকদের জন্য সহজে আমলযোগ্য কয়েকটি ছোট ছোট দোয়া পেশ করা হল—

সব ধরনের অনিষ্টতা থেকে হেফাজতের দোয়া:  হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেহ সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করলে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।

দোয়া : বিসমিল্লাহিল্লাজী লা ইয়াদুররু মায়াসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলীম।

অর্থ : আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। -তিরমিজি  ও আবু দাউদ

কোনো সম্প্রদায় থেকে ক্ষতির আশংকা হলে দোয়া : হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) যখন কোনো সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা করতেন তখন বলতেন—

দোয়া : আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফী নুহুরিহীম, ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহীম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখি করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। -আবু দাউদ ও নাসাই

রোগী দেখার দোয়া : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো বিপদগ্রস্ত বা রোগী দেখে এই দোয়া পাঠ করে সে কখনও এমন বিপদ কিংবা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় না।

দোয়া : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজী আফিনী মিম্মাবতালাকা বিহী, ওয়া ফাদ্দিলনী আলা কাছিরীম-মিম্মান খালাকা তাফদিলা।

অর্থ : ‘সমস্ত প্রসংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং তার বহু সংখ্যক সৃষ্টির ওপর আমাকে মর্যাদা দান করেছেন।’ –তিরমিজি

বিপদ-মসিবতের সময় পাঠ করার দোয়া : হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে সে যদি এই দোয়া পাঠ করে- আল্লাহতায়ালা তাকে তার বিপদের প্রতিদান দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।

দোয়া : ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুসিবাতী ওয়া আখলিফ-লী খাইরাম মিনহা।

অর্থ : আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চেয়ে ভালো কিছু দান করুন। -সহিহ মুসলিম

বিপদের সময় পাঠ করার দোয়া: হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিপদের সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন—

দোয়া : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল হাকীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি- ওয়া রাব্বুল আরশিল কারীম।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশমন্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

ঋণ মুক্তির দোয়া : হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, এক চুক্তিবদ্ধ দাস তার কাছে এসে বলে, আমি আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধে অপারগ হয়ে পড়েছি। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব যা আমাকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছিলেন। যদি তোমার ওপর পর্বত পরিমাণ দেনাও থাকে তবে আল্লাহতায়ালা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি বলেন, তুমি পাঠ করবে—

দোয়া : আল্লাহুম্মাকফিনী বিহালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনী বিফাদলীকা আম্মান সিওয়াক।

অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার হালাল দ্বারা আমাকে তোমার হারাম থেকে দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ভিন্ন অপরের মুখাপেক্ষি হওয়া থেকে স্বনির্ভর কর। -তিরমিজি ও বায়হাকি

গীবতকারী ও শ্রবণকারীর রক্ষা নেই


x

Decrease font Enlarge font
গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ দোষারোপ করা, কুৎসা রটনা, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষগুলো অন্যেও সামনে তুলে ধরা। ইসলামি শরিয়তে গীবত হারাম ও কবিরা গুনাহ। যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায় তাদের জন্য ইসলামে ধবংসের দুঃসংবাদ রয়েছে। (মুসলিম)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না’। (সূরা আল-হুজুরাত,আয়াত-১২)

গীবতের সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ভালো জানেন। তিনি বলেন, তোমার কোনো ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তাই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গীবত করলে আর তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছো। (মুসলিম)

অনেকে ভাবতে পারেন আমিতো গীবত করি না। অন্যে বলে আমি শুধু শুনি। না, তাদেরও রক্ষা নেই। কারণ তারা গীবতকারীকে সাহায্য করছে এই পাপ কাজ করতে। গীবতকারী গীবত করার জন্য যদি কাউকে না পায় তাহলে সে আর গীবত করতে পারবে না। আর তাই গীবত শ্রবণকারীদের জন্যও রয়েছে আল্লাহর হুকুম। ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত করা যেমন নিষেধ, তেমনি গীবত শোনাও নিষেধ। যে গীবত শোনে সেও গীবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। হাদিস শরিফে আছে, যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে অন্যের গীবত করে তখন তাকে থামতে বলুন, আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন। আর তাতেও যদি কাজ না হয় তবে সেখান থেকে সরে আসুন। কোনোভাবেই গীবত শোনা যাবে না।

গীবতকারীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম) 

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমি তামার নখ বিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা নখগুলো দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিব্রাইল! এরা কারা? জিব্রাইল(আ.) বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করতো এবং তাদের মান-সম্মান নষ্ট করতো। অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত ও চোগলখোরী করতো। (আবু দাউদ)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে অর্থাৎ গীবত করবে, কিয়ামতের দিন গীবতকারীর সামনে গীবতকৃত ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় উপস্থিত করা হবে এবং বলা হবে তুমি মৃত অবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ কর যেমনভাবে জীবতাবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ করতে। অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে। (বুখারী)

সুতরাং অন্যের সমালোচনায় মত্ত না থেকে নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই যাতে করে নিজের দোষগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল গীবত কি জেনার চেয়েও মারাত্মক? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, কারণ কোনো ব্যক্তি জেনার পর (বিশুদ্ধ) তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গীবতকারীকে যার গীবত করা হয়েছে, তিনি মাফ না করলে আল্লাহ মাফ করবেন না। (মুসলিম)

গীবতের কাফফারা হলো, যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করা। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, গীবতের কাফফারা হলো, তুমি যার গীবত করেছো, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি এভাবে করবে, হে আল্লাহ তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও। (বায়হাকি)

আমেরিকার শতভাগ মুসলিম বাসিন্দার শহর


x

Decrease font Enlarge font
আমেরিকার সাউথ ক্যারোলিনা (South Carolina) রাজ্যের ইয়র্ক (York) সিটির এক ছোট্ট শহরের নাম ইসলামভিল (Islamville)। শহরটিতে মাত্র ৩০০ লোকের বাস। কিন্তু ওই শহরটির শতভাগ বাসিন্দাই ইসলাম ধর্মাবলম্বী।

শহরটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরগুলোর মতো চাকচিক্যময় নয়। কোনো দোকান নেই, ব্যবসায়-বাণিজ্য নেই। এমনকি কোনো মহাসড়কও নেই শহরটিতে। সেখানে কোনো রোড সাইন নেই যা দ্বারা কেউ বুঝতে পারবে শহরটিতে সে পৌঁছে গিয়েছে।

শুধু একটি সবুজ লোহার গেট রয়েছে যেখানে লেখা- বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। গেটের পরেই একটি রাস্তা পাশের বনের ভিতর দিয়ে শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। রাস্তাটির উপরে এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এ শহরের ঘরগুলো কাঠ দ্বারা নির্মিত।

শহরের বাড়িগুলোর সামনে বাচ্চাদের খেলনাপাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। লম্বা লম্বা পাতাবিহীন গাছের ফাঁক-ফোকর দিয়ে পায়ে চলার পথ দেখা যায়। এ শহরের সব বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান।

১৯৮৩ সালে এই শহরটির গোড়াপত্তন করেন আফ্রিকান মুসলিমরা। শুরুতে ২০টি পরিবার এখানে বসবাস করা শুরু করেন। আফ্রিকান ধর্মীয় নেতা শায়খ মোবারক আল গনির পরামর্শে তারা এখানে থাকতে শুরু করেন।

ইসলামভিলে বর্তমানে ধর্মীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আঙ্কেল মুসা (Uncle Musa)। তিনি নামাজের ইমামতি ও বাচ্চাদের আরবি শেখানো থেকে শুরু করে সব ধর্মীয় কাজের নেতৃত্ব প্রদান করেন।

ইসলামভিলের মেয়র হিসেবে রয়েছেন তরুণ সাঈদ শাকির (Saeed Shakir)। তিনি অবশ্য পার্শ্ববর্তী শহরের অন্য একটি চাকরি করেন। মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন অবসর সময়ে।

শান্ত, নিরুপদ্রব এই মুসলিম শহরে রয়েছে একটি নামাজ ঘরও। এখানকার বাসিন্দারা মিলেমিশে জীবন-যাপন করেন। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের মাঝে বড় হয় এখানকার ছেলেমেয়েরা।

মার্কিন রাজনীতিতে এখানকার বাসিন্দাদের খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেকেই খোঁজার চেষ্টা করেন পুরো আমেরিকার মুসলমানদের মনোভাব ইসলামভিলের বাসিন্দাদের মাঝে। এ এক কাকতালীয় ব্যাপার। মনে করা হয়, ইসলামভিলের বাসিন্দাদের মাঝে একটা আধ্যাত্মিক ব্যাপার রয়েছে। তাই অাফ্রিকান-মার্কিন মুসলমানরা তাদের খুব মান্য করে চলেন।

নবীদের কাছে মাতৃভাষায় আল্লাহর বিধান এসেছে

Decrease font Enlarge font
আরবের লোকেরা আরবি ভাষায় কথা বলেন। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবে জন্মেছেন। তার মাতৃভাষা ছিল আরবি। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর প্রথম ওহি নাজিল হয়- ‘ইকরা’ শব্দে।

ইকরা আরবি ভাষা, যার অর্থ পড়ো। হজরত রাসূল (সা.) সহজে যেন তার মনের ভাব মানুষের কাছে প্রকাশ করতে পারেন, আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত ওহিগুলো বর্ণনা করতে পারেন, মনের ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে যেন রাসূল (সা.)-এর কোনো কষ্ট না হয় এবং আরবের লোকজনও যেন সহজে রাসূল (সা.)-এর ভাষা বুঝতে পারে সেজন্যে আল্লাহ আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছেন।

পৃথিবীর জমিনে এক লাখ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল এসেছেন। তারা নিজ নিজ ভাষায় দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন এবং উম্মতদের বুঝিয়েছেন। আল্লাহ প্রত্যেক নবীর কাছে নবীর নিজস্ব ভাষায় ওহি পাঠিয়েছেন। যেন ওহির ভাষা বুঝতে নবীর কষ্ট না হয়।

এ প্রসঙ্গে সূরা ইবরাহিমের চার নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনো নবীই এমন পাঠাইনি, যে (নবী) তার জাতির (মাতৃ) ভাষায় (আমার বাণী তাদের কাছে পৌঁছায়নি), যাতে করে সে তাদের কাছে (আমার আয়াত) পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলতে পারে।’

সূরা হা-মীম আস সাজদাহর ৪৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি যদি এ কোরআন (আরবি ভাষার বদলে) আজমি (অনারব ভাষায়) বানাতাম, তাহলে এরা বলত, কেন এর আয়াতগুলো (আমাদের ভাষায়) পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হলো না; কোরআন আজমি ভাষায় অথচ এর বাহক আরবি ভাষার লোক।’

সূরা আশ শুরার সাত নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এভাবেই (হে নবী!) আরবি কোরআন আমি আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে আপনি (এর দ্বারা) মক্কাবাসীর ও তার আশপাশে যারা বসবাস করে তাদের সতর্ক করে দিতে পারেন।’
ভাষার ওপর অনেক আয়াত আল্লাহ কোরআনে ওহি আকারে পাঠিয়েছেন। কোরআনে মাতৃভাষা ব্যবহারের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া ভাষা একটি জাতির পৃথক পরিচয় ও মর্যাদা বহন করে। যার একটি ভাষা আছে সে জাতি হিসেবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র।

আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক জাতিকে একটি নিজস্ব ভাষা উপহার দিয়েছেন। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। এই ভাষাতে আমরা কথা বলতে স্বাছন্দ্যবোধ করি। বাংলা ভাষার জন্য আমরা গর্ববোধ করি। আল্লাহতায়ালা কোরআনে মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিয়েছেন।

আমাদের প্রিয় ভাষার ওপর পাকিস্তানিরা আঘাত হেনেছিল। আমার মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। সেদিন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পাকিস্তানিদের অন্যায় আচরণ রুখে দিয়েছিল। বাংলার তরুণ ছাত্র জনতার লড়াই সংগ্রামে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাশাপাশি সেদিনের লড়াই সংগ্রাম কোরআনে মাতৃভাষার চর্চার গুরুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল।

ভাষা সংস্কৃতির বাহন। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার সংস্কৃতিকে আগে ধ্বংস করতে হয়। এই বিবেচনা সামনে রেখে পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষার ওপর আঘাত হানে। বাঙালিদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজ সংস্কৃতি। কোরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ভিন্ন ভাষায় যতটা বুঝতে পারব, এর চেয়ে শত ভাগ বেশি বুঝতে পারব বাংলা ভাষায়। অর্থাৎ আমাদের নিজস্ব ভাষায়। আল্লাহতায়ালা নিজেই তার ওহি বোঝার জন্য মাতৃভাষাকে নির্বাচন করেছেন। প্রত্যেক নবী ও রাসূলের কাছে স্বজাতির ভাষায় ওহি পাঠিয়ে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নিজ নিজ জাতিকে সম্মানিত করা হয়েছে। কোরআনের আয়াতগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, মাতৃভাষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আজকাল আমরা ভিন্ন ভাষার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী। অন্য ভাষায় কথা বলতে পারাকে আধুনিকতা বলি। ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়াতে চাই না। বাংলা ভাষার চেয়ে শিশুরা কতটা ইংরেজি পড়তে বলতে লিখতে পারে; এসব নিয়ে অভিভাবকেরা ব্যস্ত।

মা শব্দ কতটা মধুর। যে মায়েরা মা ডাক শুনেছেন তারা শুধু বলতে পারবেন। মা ডাকের সাথে কত আবেগ কত মমতা কত ভালোবাসা জড়িত। এটা কলমে লিখে বুঝানো সম্ভব হবে না। কোরআনে মাতৃভাষা চর্চার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলা ভাষার প্রতিও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষার চর্চা বৃদ্ধি পাবে। বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হবে। জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। কোরআনের প্রতিও যথাযথ সম্মান জানানো হবে।

মনের স্থিরতা আনার কোরআনি আমল

Decrease font Enlarge font
বর্তমান বিশ্ব অদ্ভুত, অস্থির ও যন্ত্রণাময়। যার অধিক আছে সেও অস্থির, যার কিছু নেই সেও অস্থির। কেউ অস্থির নিজের সীমা বাড়াতে, কেউ অস্থির নিজের শক্তি বাড়াতে। এ কারণে প্রতিনিয়ত মন যেনো জলপ্রপাতের সামনে দাঁড়ানো চারাগাছের মতো দোদুল্যমান। ফলে মনের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে, বিঘ্নিত হচ্ছে বিশ্বশান্তি।

তাই সমাজ-সংসার ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মনের স্থিরতা অতীব জরুরি বিষয়। আমরা জানি, বর্তমান কর্মব্যন্ত যুগে মানসিক চাপ অনেকেরই নিত্যসঙ্গী। প্রচুর কাজের চাপে মানসিক চাপ সমস্যায় বহু মানুষই বিপর্যন্ত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পবিত্র কোরআনে কারিমের একটি আয়াত নিয়মিত তেলাওয়াত করা যেতে পারে। বুজুর্গরা বলেছেন, তাতে মনে স্থিরতা আসবে।

আয়াতটি কোরআনে কারিমের সূরা হুদের ১১২ নম্বর আয়াত। আয়াতটি হলো-

  فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

উচ্চারণ: ‘ফাসতাকিম কামা উমিরতা- ওয়ামান তাবা মাআকা, ওয়ালা তাতগাও ইন্নাহু বিমা তা’মালুনা বাসির।’

অর্থ : সুতরাং (হে পয়গম্বর) তোমাকে যেভাবে আদেশ করা হয়েছে তাতে (সরল পথে) দৃঢ়ভাবে অবস্থান করো, তুমি এবং তোমার সঙ্গে যারা (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছো (সবাই, সঠিক পথ থেকে) সীমালংঘন করো না। তোমরা যা করো তিনি (আল্লাহ) তা ভালোভাবেই দেখেন।

আমল: প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর বর্ণিত আয়াতখানা ১১ বার করে পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ মনের অস্থিরতা দূর হবে। অন্তরে প্রশান্তি মিলবে।

আয়াতের তাফসির: বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতালা মুমিন বিশ্বাসীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, বিরুদ্ধবাদীদের আচরণ যেন তাদের মনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিজের মত বিশ্বাসের ওপর স্থির ও অবিচল থাকতে হবে। এর পাশাপাশি বিরুদ্ধবাদীদের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে কখনও আল্লাহর দেওয়া সীমারেখা অতিক্রম করা যাবে না।

হজরত রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন, সূরা হুদ আমাকে বৃদ্ধ করে ফেলেছে। বস্তুত এই আয়াতের কারণেই আল্লাহর রাসূল এমন মন্তব্য করেছিলেন। এখানে যেমন পয়গম্বরকে ধৈর্য ও প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে, তেমনি মুমিন বিশ্বাসীদেরকে স্থির অবিচল থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, খোদোদ্রোহী শক্তির অনুপ্রেরণায় নিজের আদর্শের ব্যাপারে যেমন অমনোযোগী বা আপোষকামী হওয়া যাবে না; তেমনি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়িও করা যাবে না। প্রতিরোধ ও ভারসাম্যমূলক অবস্থানই হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা।

নোট : আরবির সঠিক ও যথাযথ উচ্চারণ বাংলায় পুরোপুরি করা সম্ভব হয় না। তাই আয়াতটি আপনার নিকটস্থ মসজিদের ইমাম-খতিব কিংবা কোনো অালেমের কাছ থেকে শিখে নিবেন।

সন্তান-সন্তুতির প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসা

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

x

Decrease font Enlarge font
সন্তানের প্রতি স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা মানুষের সহজাত। ভালোবাসার শক্ত এ ভিতের ওপরই টিকে আছে মানবজাতি, দাঁড়িয়ে আছে মানবসভ্যতা। মমতার গভীর এ মেলবন্ধন না থাকলে অন্যান্য জীবগোষ্ঠীর মতো হয়তো মনুষ্য জাতিও এতোদিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতো।

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার প্রপাঢ় ভালোবাসার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জেনে রেখো! নিশ্চয় সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি (এর মোহ ও মমতা) তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা।’ -সূরা আনফাল : ২৮

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।’ -সূরা কাহাফ : ৪৬

এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা সন্তানের প্রতি নবীদের স্নেহ ও মমতার একাধিক দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। যেমন, প্রিয় সন্তান হজরত ইউসুফকে হারিয়ে হজরত ইয়াকুবের ব্যাকুলতার বর্ণনা। সন্তানের জন্য কাঁদতে কাঁদতে তার দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত লোপ পায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সে বললো, আফসোস ইউসুফের জন্য! শোকে তার দু’চোখ সাদা হয়ে গেছে এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট। তারা বললো, আল্লাহ শপথ! আপনি ইউসুফের কথা ভুলবেন না, যতোক্ষণ না আপনি মুমূর্ষ হবেন অথবা মৃত্যুবরণ করবেন।’ -সূরা ইউসুফ : ৮৪-৮৫

দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরও সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসা ও মমতা ছিলো অক্ষুণœ। পুত্র ইউসুফের শরীরের গন্ধ পর্যন্ত তিনি তখনও ভুলেননি। তার শরীরের গন্ধ টের পেয়ে বলেছিলেন, ‘নিশ্চয় আমি ইউসুফের গন্ধ পাচ্ছি।’ -সূরা ইউসুফ : ৯৪

একইভাবে বিপদগামী সন্তানের ধ্বংস দেখে হজরত নুহ (আ.)-এর পিতৃহৃদয় কেঁদে ওঠে। তিনি আল্লাহর দরবারে আকুতি জানান, ‘হে আমার প্রভু! আমার ছেলে তো আমার পরিবারভুক্ত। আর তাদের (রক্ষার) ব্যাপারে আপনার অঙ্গীকারও সত্য। নিশ্চয় আপনি সর্বোচ্চ ন্যায় বিচারক।’ -সূরা হুদ : ৪৫

সন্তান যেমনই হোক পিতা-মাতার অন্তরে তাদের জন্য স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসার একটি জায়গা সব সময় থাকেই। তারা সব সময় সন্তানের কল্যাণ কামনা করেন।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)ও ছিলেন তার সন্তান-সন্তুতি ও পরিবারের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল। তিনি তার সন্তানদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তুলনায় পরিবার-পরিজনের প্রতি অধিক স্নেহ-মমতা পোষণকারী আর কাউকে দেখিনি।’ -আল আদাবুল মুফরাদ : ৩৭৬

হজরত রাসূলে আকরাম (সা.) ৭ সন্তানের জনক ছিলেন। তন্মধ্যে ৩ ছেলে হলো- কাসেম, ইবরাহিম ও আবদুল্লাহ। আর মেয়ে ৪ জন হলো- জায়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতেমা। ছেলেদের সবাই শৈশবে মারা যান। মেয়েদের মধ্যে হজরত ফাতেমা (রা.) ব্যতীত সবাই রাসূল (সা.)-এর পূর্বেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।

হজরত ফাতেমা (রা.)-এর দুই পুত্র হজরত হাসান ও হোসাইন (রা.)-এর মাধ্যমে রাসূল (সা.)-এর বংশের বিস্তৃতি ঘটে। রাসূল (সা.)-এর মৃত্যুর ৬ মাস পর হজরত ফাতেমা (রা.)ও ইন্তেকাল করেন। -মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী, ইসলামের ইতিহাস, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২২৮


সন্তান জন্মের সংবাদে রাসূল (সা.) আনন্দিত হতেন। হজরত আবু রাফে (রা.) যখন রাসূল (সা.) কে তার পুত্র ইবরাহিমের জন্মের সংবাদ দেন, তখন তিনি খুশি হয়ে তাকে একজন দাস বা সেবক দান করেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সন্তানদের নাম রাখেন। শুধু সন্তান নয় নাতি-নাতনির জন্যও সুন্দর সুন্দর নাম নির্বাচন করেন তিনি। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, হাসান জন্মগ্রহণ করলে আমি তার নাম রাখি ‘হারব’। অতপর রাসূল (সা.) আসলেন এবং বললেন, আমাকে আমার নাতি দেখাও। তোমরা তার কী নাম রেখেছো? হজরত আলি (রা.) বলেন, আমি বললাম, হারব।’ রাসূল (সা.) বললেন, না। তার নাম হাসান।’ -মুসনাদে আহমদ : ৭৬৯

রাসূল (সা.) তার সন্তান এবং নাতিদের জন্মের পর তাদের চুলের ওজনে রৌপ্য দান করেন এবং সবার নামে আকিকা করেন। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) হাসানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আকিকা করেন। এবং বলেন, ফাতেমা! হাসানের মাথা মুড়িয়ে দাও এবং তার চুলের সমপরিমাণ রৌপ্য সদকা করো।’ -সুনানে তিরমিজি : ১৫১৯

শত ব্যস্ততার মাঝেও রাসূল (সা.) তার সন্তানদের আদর-যত্ন করতেন এবং খোঁজ-খবর রাখতেন। তাদেরকে কোলে তুলে আদর করতেন। চুমু খেতেন; এমনকি তাদের শরীরের ঘ্রাণ নিতেন।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তুলনায় পরিবার-পরিজনের প্রতি অধিক স্নেহ-মমতা পোষণকারী আর কাউকে দেখিনি। তার এক পুত্র (ইবরাহিম) মদিনার উপকণ্ঠে দুধ পান করতো। তার দুধমা ছিলো কায়না। আমরা তার কাছে যেতাম। ...রাসূল (সা.) তাকে চুমু খেতেন এবং তার ঘ্রাণ নিতেন।’ -আল আদাবুল মুফরাদ : ৩৭৬

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রা.) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহকে দেখেছি, তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। অতপর হাসান ও হুসাইন (রা.) তার সামনে আসলো। তাদের গায়ে ছিলো লাল জামা। তারা পা পিছলে পরে যাচ্ছিলো আর দাঁড়াচ্ছিলো। রাসূল (সা.) নামলেন এবং তাদের দু’জনকে ধরে কোলে বসালেন। অতপর রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ সত্যই বলেছেন, নিশ্চয় সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা। আমি এ দু’জনকে দেখে নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি। এরপর পুনরায় খুতবা শুরু করলেন।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৬০০

রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতা শুধু ছেলে শিশুর জন্য ছিলো না; বরং তিনি তার পরিবারের কন্যা শিশুকেও সমান ভালোবাসতেন। হজরত আবু কাতাদা আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নিশ্চয় রাসূল (সা.) নামাজ আদায় করছিলেন। তার কোলে ছিলো- আবুল আস ইবনে রাবিআহ ও রাসূল (সা.)-এর মেয়ে জয়নব (রা.)-এর সন্তান উমামা। নবী করিম (সা.) সেজদা যাওয়ার সময় তাকে নামিয়ে রাখছিলেন এবং সেজদা থেকে দাঁড়িয়ে তাকে কোলে নিচ্ছিলেন।’ -সহিহ বুখারি : ৫১৬

রাসূল (সা.) নিজে যেমন কন্যা সন্তানকে অবহেলা করতেন না, তেমনি কেউ পুত্র সন্তানের তুলনায় কন্যা সন্তানকে অবহেলা করলে রাসূল (সা.) তাকে সতর্ক করতেন। হজরত আনাসা (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বসাছিলো। এ সময় তার পুত্র সন্তান তার কাছে এলো। সে তাকে চুমু দিলো এবং কোলে তুলে নিলো। এরপর তার কন্যা সন্তান এলো এবং সে তাকে সামনে বসিয়ে দিলো। এ দৃশ্য দেখে তিনি বললেন, এদের উভয়ের সঙ্গে একই রকম আচরণ করলে না কেনো?’ -মুসনাদে বাজ্জার : ৬৩৬১

সন্তান-সন্তুতি কান্না করলে রাসূল (সা.) বিচলিত হতেন। তাদেরকে কোলে তুলে নিয়ে শান্ত করতেন। একবার রাসূল (সা.)-এর কানে হজরত হোসাইন (রা.)-এর কান্না এলো। এতে তিনি ভীষণ ব্যথিত হলেন। তিনি হজরত ফাতেমা (রা.) কে বললেন, তুমি কী জান না তার কান্না আমাকে কষ্ট দেয়।’ -দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃষ্ঠা-১২৪

কন্যাদের সঙ্গে রাসূল (সা.) এর সুগভীর হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। সুখে দুঃখে তিনি তাদের পাশে থাকতেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নিতেন। তাদের সুখে তিনি আনন্দিত হতেন এবং দুঃখে ব্যথিত হতেন। তাদেরকে সান্তনা দিতেন। কখনও তারা রাসূল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হলে আদর করে পাশে বসাতেন এবং একান্ত আলাপচারিতায় মেতে উঠতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ফাতেমা হেঁটে আসলো। তার হাঁটার ভঙ্গিটা ছিলো যেনো রাসূল (সা.)-এর হাঁটার মতো। রাসূল (সা.) বললেন, আমার কন্যাকে অভিনন্দন। অতপর তিনি ফাতেমাকে তার ডান বা বাম পাশে বসালেন। নবী (সা.) তাকে গোপন কোনো কথা বললেন, ফলে সে কাঁদলো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কাঁদছো কেনো? অতপর রাসূল (সা.) তাকে আরেকটি গোপন কথা বললেন, ফলে সে হাসলো।’ -সহিহ বোখারি : ৩৬২৩

হজরত ফাতেমা (রা.) ছিলেন নবী করিম (সা.)-এর সবচেয়ে প্রিয় কন্যা। তার ব্যাপারে নবী করিম (সা.) বলতেন, ফাতেমা আমার দেহের একটি অংশ। যাতে তার কষ্ট হয়, তাতে আমারও কষ্ট হয়।’ -সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভি রহ., নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা- ৪২৩

বিয়ের পরও রাসূল (সা.) তার কন্যাদের প্রতি লক্ষ রাখতেন। তাদের ভালো-মন্দের খোঁজ রাখতেন। বদর যুদ্ধে যাওয়ার সময় তার কন্যা হজরত রুকাইয়া (রা.) অসুস্থ ছিলেন। তার সেবা-যত্নের জন্য স্বামী হজরত উসমান (রা.) কে মদিনায় রেখে যান। -সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভি রহ., নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা- ৪২৪

এমনিভাবে তার কন্যা হজরত জয়নব (রা.) স্বামীর মুক্তিপণ হিসেবে অন্যান্য সম্পদের সঙ্গে মায়ের দেওয়া হার মদিনায় পাঠিয়ে দেন। রাসূল (সা.) হারটি দেখে স্মৃতিকাতর হন এবং তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন। অতপর সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর সঙ্গে আলোচনা করে শুধু হারটি ফেরত দেন। -সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভি রহ., সীরাতে রাসূল আকরাম সা., পৃষ্ঠা- ১১৩

হজরত ফাতেমা (রা.) ব্যতীত রাসূল (সা.)-এর বাকি সব সন্তান তার জীবদ্দশায়ই মারা যান। পিতা হিসেবে রাসূল (সা.)-এর জন্য এ ছিলো সীমাহীন কষ্টকর এক অভিজ্ঞতা এবং ঈমানি পরীক্ষা। তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাসূল (সা.) তার সন্তানদের মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছেন এবং কেঁদেছেনও। কিন্তু তিনি এমন কোনো আচরণ করেননি যাতে আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ পায়; তিনি তার সব কষ্টকে ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করেন। রাসূল (সা.)-এর পুত্র ইবরাহিম মারা গেলে তিনি বলেন, ‘আমাকে না দেখিয়ে তাকে কাফন পরিও না। অতপর তিনি আসেন এবং তার প্রতি ঝোঁকেন ও কাঁদেন।’ -সুনানে ইবনে মাজা : ১৪৭৫

অশ্রসিক্ত নয়নে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমরা তোমার বিচ্ছেদে ব্যাথিত। চোখ অশ্রু ঝরাচ্ছে এবং অন্তর বিষাদগ্রস্থ। আমরা এমন কোনো কথা বলবো না যাতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’ -কানজুল উম্মাল : ৪২৪৫০

রাসূল (সা.) নিজেই শুধু সন্তান-সন্তুতি ও পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসেননি; বরং তিনি প্রতিটি মুমিনকে সন্তানের প্রতি স্নেহশীল হতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা শিশুদেরকে ভালোবাস এবং তাদের প্রতি দয়া করো। তাদের সঙ্গে কোনো ওয়াদা করলে তা পূর্ণ করো। কেননা তারা তোমাদেরকে তাদের রিজিক সরবারহকারী বলে জানে।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

সুতরাং প্রতিটি মুমিনের জন্য দায়িত্ব হলো, জীবনের সৌন্দর্য ও সম্পদ সন্তানের প্রতি স্নেহশীল হওয়া এবং তাদেরকে কল্যাণকামিতার সঙ্গে প্রতিপালন করা।

মিথ্যা সাক্ষ্য ভয়াবহ পাপের কাজ

মাওলানা শওকত হোসাইন, অতিথি লেখক, ইসলাম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

x

Decrease font Enlarge font
সহিহ বোখারি শরিফের এক হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, মহানবী (সা.) সাহাবাদের বলেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের কথা বলব না? সাহাবারা বললেন, নিশ্চয়ই, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। অতঃপর তিনি হেলান দেওয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসলেন (পরবর্তী কথার প্রতি গুরুত্বারোপ করার জন্য) এবং বললেন, মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। এ কথাটি তিনি এত বেশিবার বলতে লাগলেন যে, সাহাবারা মনে মনে বলতে লাগলেন, এবার যদি তিনি থামতেন!

অন্য আরেক হাদিসে আছে, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, হে মানুষ! জেনে রেখো, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার মতো গণ্য করা হয়েছে। অতঃপর তিনি কোরআনের এ আয়াতেন অংশটি পড়েন, ‘তোমরা মূর্তিপূজার মতো গর্হিত কাজ এবং মিথ্যা বলা পরিহার কর।’ –তিরমিজি

যার মধ্যে সামান্য পরিমাণ মানবতাবোধ আছে, সে কখনও মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে না। এ ধরনের ব্যক্তি দুনিয়ার লোভে নিজেদের বিবেক ও মনুষ্যত্ব বিক্রি করে দেয়। এজন্য মহান আল্লাহ এদের নিজের বান্দা হিসেবে গণ্য করেননি। পবিত্র কোরআনের সূরা ফোরকানে আল্লাহর বান্দাদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘...আর যারা মিথ্যা সাক্ষ দেয় না...।’

মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া যেমন অপরাধ, প্রয়োজনে সত্য সাক্ষ্য গোপন করাও তেমন অপরাধ। এজন্য পবিত্র কোরআনে সত্য সাক্ষ্য গোপন না করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে ব্যক্তি তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপী সাব্যস্ত হবে। তোমরা যা করো, আল্লাহ তার খবর রাখেন।’ –সূরা আল বাকারা : ২৮৩

সত্য সাক্ষ্য গোপন করা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ারই নামান্তর। যেহেতু উভয়টিই নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে। যখন কোনো ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্যের কারণে অন্যায়ভাবে ফেঁসে যায়, তখন সত্য সাক্ষ্য দিয়ে তাকে উদ্ধার করা নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য পবিত্র কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে নিজেদের সত্যের সাক্ষী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করো- যদিও তা তোমাদের নিজেদের, তোমাদের মা-বাবার কিংবা তোমাদের নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়- চাই সে ধনী হোক কিংবা গরিব হোক (তা দেখার বিষয় নয়)। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি তাদের চেয়ে বড় বিষয়। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচারের সময় নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না। যদি তোমরা পেঁচানো কথা বল কিংবা (সত্য সাক্ষ্য দেওয়া থেকে) বিরত থাকো- তাহলে জেনে রেখো, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহর তার খবর রাখেন।’ –সূরা আন নিসা: ১৩৫

উপরোক্ত আলোচনা থেকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার পরিণাম জানা গেল। মিথ্যা সাক্ষ্যের মাধ্যমে দুনিয়াতে কিছু সুযোগ-সুবিধা হয়তো লাভ করা যাবে, কিন্তু আখিরাতে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। ‘যারা সামান্য মূল্যের বিনিময়ে আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে বিক্রি করে দেয়, আখেরাতে তাদের কোনো অংশ থাকবে না। আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকবেন না। তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদের গোনাহ থেকে পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ -সূরা আল ইমরান: ৭৭

মহান আল্লাহ আমাদের মিথ্যা সাক্ষ্য পরিহার করে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।